বৃহস্পতিবার, ২৬ মে, ২০১৬

কবিতাসম্ভোগ- মাসুম সরকার

কবিতারও শরীর থাকে
থাকে অবয়ব, সুগঠিত স্তন
নিতম্ব, গ্রীবা
মসৃণ ত্বকের সুষমা,
থাকে কি-বা
প্রশ্রয়ের অনুপম ক্ষণ
বিরাগ কিংবা ক্ষমা।

কবিতাও কাড়ে মন,
প্রতিষ্ঠার দেয়াল ভেঙ্গে উদ্বাস্তু প্রেম
ঘরছাড়া বিবাগী যেমন।

কবিতাও সম্ভোগবঁধু
সংগোপনে আত্মক্ষরণ
কবিতার গভীরে স্খলনে
প্রেমিকের কাঙ্ক্ষিত মরন।


১৬.০৮.০৮
বাস্তুভিটা, সিরাজগঞ্জ


কাব্যগ্রন্থঃ কবিতাসম্ভোগ
প্রকাশনীঃ প্যাপিরাস
প্রথম প্রকাশঃ ২০০৮



মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০১৪

একটি চিঠি- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

বলাকা তোমার শুভ্র চোখেতে পায়নি ঘুম ?
জানোনা কি এটা কুয়াশায় ঢাকা
রাত নিঝুম !
স্বপ্ন দেখো না ? এখনো কি তার
সময় নয় ?
বলাকা, তুমি কি পেয়েছো ভয় ?
জানো নাকি আমি পথে ঘুরে-ঘুরে দিশেহারা-
আকাশের মায়া গান গেয়ে করে
গৃহছাড়া।
তোমার বাশিতে ফুঁ দিয়েছি আমি
সেই ধ্বনি-
বলাকা এই কি জাগরণী ?
মরু পর্বতে ঘুর্ণিঝড় যে হোল শুরু ।
আকাশের বুকে মেঘশিশুদের
গুরু গুরু ।
হিংস্র নখর এখনো লুকোয় বাকে-বাকে
সরল কুমারী বোকা চোখে শুধু
চেয়ে থাকে ।
সমুদ্র-ঝড় আসেনি এখনো মনে-মনে ?
বলাকা-হৃদয় এখনও কি শুধু দিন গোনে ।
মন উত্তাল পাখি শুধু ডাকে বোবা যুগে ,
ফেরারী বাহিনী বছর কাটায়
উদ্যোগে ।
মনের সূর্য তবুও ভাংবে অন্ধ ঘোর
বলাকা, তুমি কি দেখনি ভোর ?
হৃদয় জাগানো পরশমণির সন্ধানেই
তাই তো অলস দুপুর যাপনে
শঙ্কা নেই ।
স্বপ্ন-সাগরে দিয়েছি নিজেকে
বিসর্জন
বলাকা, তোমার গ্রন্থি হবেনা উন্মোচন ?



 বি.দ্রঃ ১৯৫২ সালের ২৯ মার্চ সংখ্যার দেশ পত্রিকাতে প্রথম প্রকাশিত হয় সুনীলের প্রথম কবিতা একটি চিঠি। কবির বয়স তখন ছিল ১৭। কবিতাটি এক কিশোরীর মন পাওয়ার আশায় রচিত। কারণ সুনীল জানতেন, সেই কিশোরীর বাসায় অন্যান্য পত্রিকার সঙ্গে রাখা হতো দেশ পত্রিকাটি। তাই তার মন পাওয়ার জন্য অথবা নিজের অব্যক্ত কথা ব্যক্ত করার জন্য বের করলেন অভিনব এক বুদ্ধি। নিজেকে কবি হিসেবে কিশোরীর কাছে পৌঁছানোর অন্য কোনো উপায় না পেয়ে একরকম পথ বেছে নেন তিনি। সুনীলের নিজের কথায় - ‘একটি রচনা ঝোঁকের মাথায় পাঠিয়ে দিয়েছিলাম ‘দেশ’ পত্রিকায়। বিস্তারিত জানতে এই লিংক এ যান।

সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০১৪

এলোমেলো

আমার সুনীল এর মতো কোণ দ্বীপ নেই
যেটা বেঁচে একটা নদী কিনে ফেলতে পারতাম
নেই জীবনানন্দের মতো বনলতা সেন
যার জন্য হাজার বছর আমি পথ হেঁটে যাবো।
আমি খুব সাধারন, চিরায়ত
বহুদুর পানে নির্নিমেষ চেয়ে থাকা
সপ্নাতুর এক বোহেমিয়ান।

শীতের সকালে শিশির স্নাত একটা ঘাস ফুলের জন্য
রোদেলা দুপুরে একটু ছায়ার জন্য
পড়ন্ত বিকেলে একটি সুতো ছেড়া ঘুড়ির জন্য
মাঝ রাতে মাথা নুইয়ে থাকা লাম্পপোষ্ট এর জন্য
ধান শালিকের বেশে নয়
আমি বারংবার আমি হয়ে ফিরতে চাই
এই একি আমি হয়ে
আমিত্বের অমরত্বের প্রত্যাশায়।।


১৪.০৭.২০১৪

রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৪

অশ্রুবিন্দুতে চাঁদের প্রতিবিম্ব

আজ আকাশে আলোর বিস্ফোরণ
রাতের অন্ধকার ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে
ডোবার জলে চিকচিকে আলো
ভয়ংকর একটা চাঁদ তার সৌন্দর্য দিয়ে
যেন গ্রাস করে নিতে চাচ্ছে
জাগতিক সকল পঙ্কিলতা।

হাজার মাইল দূরে যে শিশুটি
মৃত্যু ভয়ে কুচকে আছে
ওখানেও কি আজ এমন জ্যোৎস্না?
এমন ভয়ংকর সুন্দর চাঁদ কি আজ গাজার আকাশেও উঠেছে?
শিশুটির চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রুবিন্দু
সেখানেও কি চাদের আলো পরছে?
ওখানে আজ চাঁদ না উঠলেও পারতো
অন্ধকারে ডুবে থাকতে পারলে শিশুটি বেঁচে যেত
কে চায় এমন অপার্থিব জ্যোৎস্না
যে জ্যোৎস্নার আলো পাশে নিথর পরে থাকা মায়ের মুখে পড়ে।

আজ চাঁদ ডুবে যাক
আমি দেখতে চাইনা তার নির্লজ্জ চেহারা
আজ আধারে ঢেকে যাক
আমি দেখতে চাই না অশ্রুবিন্দুতে চাঁদের প্রতিবিম্ব।

১২.০৭.২০১৪

বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০১৪

চিনতে পারোনি? -সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

যে-কোনো রাস্তায় যে-কোনো লোককে ডেকে বলো,
তুমি আমার বাল্যকালের খেলার সঙ্গী,
মনে পড়ে না?
কেন তোমার ব্যস্ত ভঙ্গি?
কেন আমায় এড়িয়ে যাবার চঞ্চলতা!
আমার অনেক কথা ছিল, তোমার জামার বোতাম ঘিরে অনেক কথা
এই মুখ, এই ভূরুর পাশে চোরা চাহনি,
চিনতে পারেনি?
যে-কোনো রাস্তায় যে-কোনো লোককে ডেকে বলো,
আমি তোমার বল্যকালের খেলার সঙ্গী
মনে পড়ে না?
আমরা ছিলাম গাছের ছায়া, ঝড়ের হাওয়ায় ঝড়ের হাওয়া
আমরা ছিলাম দুপুরে রুক্ষ
ছুটি শেষের সমান দুঃখ-
এই দ্যাখো সেই গ্রীবার ক্ষত, এই
যে দ্যাখো চেনা আঙ্গুল
এখনো ভুল???

তোমার চোখ এতো লাল কেন -নির্মলেন্দু গুণ

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে , আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য ।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত ।

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক । আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী -সেবার দায় থেকে ।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুক :
আমার জল লাগবে কি না, নুন লাগবে কি না,
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কি না ।
এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি ।

আমি বলছি না ভলোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা
খুলে দিক । কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক ।
কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুক : 'তোমার চোখ এতো লাল কেন ?'

তুমি ফিরবে- সমরেশ মজুমদার

তুমি ফিরবে কোন একদিন
হয়তো নীলিমায় হারানো কোন এক নিষ্প্রভ
বেলায়।
নতুবা কোন এক নবীন হেমন্তে,
এক নতুন দিনের নির্মল খোলা হাওয়ায়।
অথবা কোন এক শ্রাবণের দিনে
অহরহ ঝরা ঘন কাল মেঘ বৃষ্টির
মুহু মুহু নির্ঝর খেলায়।
তুমি ফিরবে কোন এক রাতে
পূর্ণিমার ভরা জোছনায়।
তুমি ফিরবে জানি বহুদিন পরে
হয়তো বা হাজার বছর পরে।
কোন এক নিঃস্ব হৃদয়ে,
লক্ষ প্রাণের ভিড়ে, তুমি ফিরবে।
বহুরুপে সেই প্রাণে, অনেক নবীনের ভিড়ে,
তোমার আমার গড়া ভালবাসার নীড়ে।