বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০১৪

পতাকা- রাশেদুজ্জামান রন।

সুনসান নিরবতা...!

একটা বিরান প্রান্তর...
মরচে পড়া আধো সোনালী রঙ
কিংবা স্যাঁতস্যেঁতে শ্যাওলা মাটিময়
অথবা পুড়ে যাওয়া ছাই রঙ্গা বুকের জমিন!

লাল রঙ বৃষ্টিতে ভাসিয়ে দু'কূল
পাজরের হাড় ক'খানা
ছিন্ন-বিছিন্ন শাড়ী
বেড়িয়ে আসা লজ্জায় নত করোটি!

বারুদের গন্ধে মাতম তোলে
হিংস্র হায়েনা
সঙ্গমে রত শুয়োরের দল
অবলীলায় ভুলে যায় মনুষ্যত্ব
ধম্মের বাণী পদতলে
নীতির বালাই নেই
ম্যাকিয়েভেলি ধন্যবাদ তোমায়!

মহা প্লাবন শুরু হয় জনন যন্ত্রে
উগড়ে দেয় রিক্ত হস্ত
ছোট্ট ডেভিড ছুটে চলে
গোলিয়াথের খোঁজে...!

মায়ের হাসি
বোনের টিকলি
বাবার চটি
দিদার চশমা
ফিরিয়ে দিতে চাই!

কাঁদতে থাকে শিশু তপ্ত চোখে
জলে জলে সিজিত প্রান্তর
সবুজে সবুজে গাঢ় সবুজ
ঢেলে দিলাম পাজরের লাল!

*মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়লে, মুক্তিযোদ্ধা ও পতাকা দেখলে, দেশের গান শুনলে বুকের ভিতর ক্যামন যেনো করে...! প্রবাসীদের নিশ্চয় আরো বেশি করে! আমার সেই সমস্ত ভাই ও বন্ধুদের তরে...
রাশেদুজ্জামান রন।

দোতলার ল্যন্ডিং মুখোমুখি ফ্ল্যাট। একজন সিঁড়িতে, একজন দরোজায় -আহসান হাবীব

: আপনারা যাচ্ছেন বুঝি?
: চ’লে যাচ্ছি, মালপত্র উঠে গেছে সব।
: বছর দু’য়েক হ’লো, তাই নয়?
: তারো বেশি। আপনার ডাকনাম শানু, ভালো নাম?
: শাহানা, আপনার?
: মাবু।
: জানি।
: মাহবুব হোসেন। আপনি খুব ভালো সেলাই জানেন।
: কে বলেছে। আপনার তো অনার্স ফাইনাল, তাই নয়?
: এবার ফাইনাল
: ফিজিক্স-এ অনার্স।
: কি আশ্চর্য। আপনি কেন ছাড়লেন হঠাৎ?
: মা চান না। মানে ছেলেদের সঙ্গে ব’সে…
: সে যাক গে, পা সেরেছে?
: কি ক’রে জানলেন?
: এই আর কি। সেরে গেছে?
: ও কিছু না, প্যাসেজটা পিছল ছিলো মানে…
: সত্যি নয়। উঁচু থেকে পড়ে গিয়ে…
: ধ্যাৎ। খাবার টেবিলে রোজ মাকে অতো জ্বালানো কি ভালো?
: মা বলেছে?
: শুনতে পাই? বছর দুয়েক হ’লো, তাই নয়?
: তারো বেশি। আপনার টবের গাছে ফুল এসেছে?
: নেবেন? না থাক। রিকসা এলো, মা এলেন, যাই।
: যাই। আপনি সন্ধেবেলা ওভাবে পড়বেন না,
চোখ যাবে, যাই।
: হলুদ শার্টের মাঝখানে বোতাম নেই, লাগিয়ে নেবেন, যাই।
: যান, আপনার মা আসছেন। মা ডাকছেন, যাই।

সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০১৪

ভারবাহী পশু- রাশেদুজ্জামান রন।

শৈশব-কৈশোর ছাড়িয়ে যৌবনের উত্তেজনায় মিশে থাকে
অনেক আশা
ভালবাসার ভাববাদী সংক্রমণে উড়ে আসে এক ঝাঁক স্বপ্ন,
আশা ও স্বপ্নের সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয় পাওয়া না পাওয়ার
খেরো খাতা
বংশ দন্ডের উচ্চ লম্ফে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়ে অনাগত ভবিষ্যত
সন্তান! তুমিতো আমার দুঃখ মোচনের শোষক পেপার
শুষে নাও আমার যত দুখ...
সত্যি, পারো কি তাই
আজো হিসেব মেলেনি

সব বন্ধন ছিন্ন করে বৈষয়িক ভাবনায় গড়ে ওঠে একজন ভারবাহী পশু
উত্তেজিত প্রতিবাদ বা মিঁইয়ে পড়া মৌনতায় জমে ওঠে কানাকানি
অভিমানগুলো স্বার্থপরতার ঢঙ্গে আত্নপ্রকাশ করে আপন আলয়ে
প্রকাশ্যে ভালবাসা পূর্ণরুপে এলেও আড়ালেই তার কদর্য রুপ
এ যেনো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ!

বৈষয়িক লালসায় পশু হয় স্বার্থপর পাষাণ
সম্পদের লোভে বন্ধন হয়ে পড়ে কন্টকময়
অস্থি-চর্ম সার খোলসের ভিতরে ভারবাহী পশু,
বলে ওঠে, "আমাকে মুক্তি দাও!"

শুরু ও শেষের কান্নার মাঝে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাইনা
ভারবাহী পশু, কী হবে এসব দিয়ে?

*বৈরাগ্য ভাববেন না, উপলব্ধি ভাবুন!

বৃত্ত- রাশেদুজ্জামান রন।

জানালা গলে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে রুপালী চাঁদ
মৃদুমন্দ হাওয়ার সাথে জোট বেঁধেছে
নিরাবরণ দেহে আছড়ে পড়ে চুম দেয়
এলো চুলের নরম ছোঁয়া

আবেশ ছড়ানো স্পর্শে মাতাল প্রকৃতি
নোনা জল শুষে নেয় দুঃখগুলো
নৈঃশব্দের মাঝে খেলা করে ঝিঁঝিঁ পোকা...
জোনাক হারিয়েছে তাবৎ আলো
ধর্ষিত আজ চাঁদের কাছে
তবুও আনন্দিত, লাজ-শরমের বালাই নেই

একাকি নির্ঘুম
ভেবে চলেছি, "আমরাও তো তাই...!"
প্রকৃতির কাছে হেরে চলেছি প্রতিনিয়ত
তবু দর্প কমেনা একটুও

অহংবোধের দোরে দেয়াল তুলেছি
আমিত্বের ইট-বালুতে
খসে পড়া দেহ লুকোতে
খুঁজে নেই মিথ্যে ছল-ছুতো

শেষে খুঁজে ফিরি আমি কে, তুমি কে?

২৪।০৩।১৪

বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০১৪

একটি পতাকা পেলে – হেলাল হাফিজ।



কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস

ব্যর্থ চল্লিশে বসে বলবেন,–’পেয়েছি, পেয়েছি’।

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে

ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে,

বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসন্মানে সাদা দুতে-ভাতে।

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ-খামারে,

সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ

সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে।

কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প – রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ।

তাঁর চোখ বাঁধা হলো।
বুটের প্রথম লাথি রক্তাক্ত করলো তার মুখ।

থ্যাতলানো ঠোঁটজোড়া লালা-রক্তে একাকার হলো,
জিভ নাড়তেই দুটো ভাঙা দাঁত ঝরে পড়লো কংক্রিটে।
মা…..মাগো….. চেঁচিয়ে উঠলো সে।

পাঁচশো পঞ্চান্ন মার্কা আধ-খাওয়া একটা সিগারেট
প্রথমে স্পর্শ করলো তার বুক।
পোড়া মাংসের উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো ঘরের বাতাসে।
জ্বলন্ত সিগারেটের স্পর্শ
তার দেহে টসটসে আঙুরের মতো ফোস্কা তুলতে লাগলো।

দ্বিতীয় লাথিতে ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে গেলো দেহ,
এবার সে চিৎকার করতে পারলো না।

তাকে চিৎ করা হলো।
পেটের ওপর উঠে এলো দু’জোড়া বুট, কালো ও কর্কশ।
কারণ সে তার পাকস্থলির কষ্টের কথা বলেছিলো,
বলেছিলো অনাহার ও ক্ষুধার কথা।

সে তার দেহের বস্ত্রহীনতার কথা বলেছিলো-
বুঝি সে-কারণে
ফর ফর করে টেনে ছিঁড়ে নেয়া হলো তার শার্ট।
প্যান্ট খোলা হলো। সে এখন বিবস্ত্র, বীভৎস।

তার দুটো হাত-
মুষ্টিবদ্ধ যে-হাত মিছিলে পতাকার মতো উড়েছে সক্রোধে,
যে-হাতে সে পোস্টার সেঁটেছে, বিলিয়েছে লিফলেট,
লোহার হাতুড়ি দিয়ে সেই হাত ভাঙা হলো।
সেই জীবন্ত হাত, জীবন্ত মানুষের হাত।

তার দশটি আঙুল-
যে-আঙুলে ছুঁয়েছে সে মার মুখ, ভায়ের শরীর,
প্রেয়সীর চিবুকের তিল।
যে-আঙুলে ছুঁয়েছে সে সাম্যমন্ত্রে দীক্ষিত সাথীর হাত,
স্বপ্নবান হাতিয়ার,
বাটখারা দিয়ে সে-আঙুল পেষা হলো।
সেই জীবন্ত আঙুল, মানুষের জীবন্ত উপমা।
লোহার সাঁড়াশি দিয়ে,
একটি একটি করে উপড়ে নেয়া হলো তার নির্দোষ নখগুলো।
কী চমৎকার লাল রক্তের রঙ।

সে এখন মৃত।
তার শরীর ঘিরে থোকা থোকা কৃষ্ণচূড়ার মতো
ছড়িয়ে রয়েছে রক্ত, তাজা লাল রক্ত।

তার থ্যাতলানো একখানা হাত
পড়ে আছে এদেশের মানচিত্রের ওপর,
আর সে হাত থেকে ঝরে পড়ছে রক্তের দুর্বিনীত লাভা-

তোমার কথা ভেবে – রফিক আজাদ।

তোমার কথা ভেবে রক্তে ঢেউ ওঠে—
তোমাকে সর্বদা ভাবতে ভালো লাগে,
আমার পথজুড়ে তোমারই আনাগোনা—
তোমাকে মনে এলে রক্তে আজও ওঠে
তুমুল তোলপাড় হূদয়ে সর্বদা…
হলো না পাশাপাশি বিপুল পথ-হাঁটা,
এমন কথা ছিল চলব দুজনেই
জীবন-জোড়া পথ যে-পথ দিকহীন
মিশেছে সম্মুখে আলোর গহ্বরে…

কেউ কথা রাখেনি-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।

কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি
ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল
শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে
তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো, কিন্তু সেই বোষ্টুমী
আর এলোনা
পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি।

মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর
তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো
সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর
খেলা করে!
নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো? আমার মাথা এ ঘরের ছাদ
ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায়
তিন প্রহরের বিল দেখাবে?

একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনো
লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্করবাড়ির ছেলেরা
ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি
ভিতরে রাস-উৎসব
অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ পরা ফর্সা রমণীরা
কত রকম আমোদে হেসেছে
আমার দিকে তারা ফিরেও চায়নি!
বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন, আমরাও…
বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই
সেই রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স, সেই রাস-উৎসব
আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবেনা!

বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ হবে!
ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠেয়ে প্রাণ নিয়েছি
দূরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীল পদ্ম
তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ
এখনো সে যে-কোনো নারী।
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটল, কেউ কথা রাখে না!

ব্যাধিকে রূপান্তরিত করছি মুক্তোয় – হুমায়ুন আজাদ

একপাশে শূন্যতার খোলা, অন্যপাশে মৃত্যুর ঢাকনা,
প’ড়ে আছে কালো জলে নিরর্থক ঝিনুক।
অন্ধ ঝিনুকের মধ্যে অনিচ্ছায় ঢুকে গেছি রক্তমাংসময়
আপাদমস্তক বন্দী ব্যাধিবীজ। তাৎপর্য নেই কোন দিকে-
না জলে না দেয়ালে-তাৎপর্যহীন অভ্যন্তরে ক্রমশ উঠছি বেড়ে
শোণিতপ্লাবিত ব্যাধি। কখনো হল্লা ক’রে হাঙ্গরকুমীরসহ
ঠেলে আসে হলদে পুঁজ, ছুটে আসে মরা রক্তের তুফান।
আকষ্মিক অগ্নি ঢেলে ধেয়ে আসে কালো বজ্রপাত।
যেহেতু কিছুই নেই করণীয় ব্যাধিরূপে বেড়ে ওঠা ছাড়া,
নিজেকে-ব্যাধিকে-যাদুরসায়নে রূপান্তরিত করছি শিল্পে-
একরত্তি নিটোল মুক্তোয়!

বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০১৪

মানবানল- হেলাল হাফিজ।


আগুন আর কতটুকু পোড়ে? 
সীমাবদ্ধ তার ক্ষয় সীমিত বিনাশ,
মানুষের মতো আর অতো নয় আগুনের সোনালি সন্ত্রাস।

আগুন পোড়ালে তবু কিছু রাখে
কিছু থাকে,
হোক না তা ধূসর শ্যামল রঙ ছাই,
মানুষ পোড়ালে আর কিছুই রাখে না
কিচ্ছু থাকে না,
খাঁ খাঁ বিরান, আমার কিছু নাই। 

০৭.০২.১৯৮১ 
কাব্যগ্রন্থঃ যে জলে আগুন জ্বলে।  

অহংকার- হেলাল হাফিজ।

বুকের সীমান্ত তুমিই বন্ধ করেছো
খুলে রেখেছিলাম অর্গল,
আমার যুগল চোখে ছিলো মানবিক খেলা
তুমি শুধু দেখেছো অনল।

তুমি এসেছিলে কাছে, দুরেও গিয়েছো যেচে
ফ্রিজ শটে স্থির হয়ে আছি,
তুমি দিয়েছিলে কথা, অপারগতার ব্যাথা
সব কিছু বুকে নিয়ে বাঁচি।

উথাল পাথাল করে সব কিছু ছুয়ে যাই
কোনো কিছু ছোয় না আমাকে,
তোলপাড় নিজে তুলে নিদারুন খেলাচ্ছলে
দিয়ে যাই বিজয় তোমাকে।

১৩.১০.১৯৮০
কাব্যগ্রন্থঃ যে জলে আগুন জ্বলে। 

শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০১৪

পাগলা হাওয়া- রাশেদুজ্জামান রন।

উনপাজুরে মনে লেগেছে ঊনপঞ্চাশের বায়ু
তরু-অরণ্যে নতুনের আহ্ববান
পাখ-পাখালীর ডাকাডাকি, ভেঙ্গে ফেলে সব অর্গল।
সঙ্গম কাল কি আসন্ন?

শিরায় শিরায় কামের আগুন
প্রেয়সীর ঠোঁটে কোমল চুম্বন
নত আজ কামাতুর দৃষ্টি...
বিরহী কোকিলের গান থেমে যায়

হাওয়ার বেগে নাচতে থাকে হাওয়ার গাড়ি
চোখে ভাসে রঙ্গিন স্বপ্ন সারি সারি
সেই সাদা-কালো স্বপ্ন হলো আজ সত্য
আহা! ইহাই কি বসন্ত?

*আমিও ভাবছি...এটাই কি বসন্ত!


১৬।০৩।২০১৪

শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০১৪

অদৃশ্য ছাঁয়া- রাশেদুজ্জামান রন।

আমি ভালবেসেছি তোমাকে, অনেক বছর আগে
ভালবাসা পেয়ে অমানুষ, তাই উঠেছে জেগে
শাসনের সুরে বারণ করেছো, কখনো উঠেছো রেগে!


আমি ভালবেসেছি তোমাকে, প্রতিশোধ-অপমানে
স্পর্শহীন রাত্রি কাটে, শুধু গান আর গানে
প্রত্যাশার চাপ দায়িত্ব বাড়ায়, বিভেদের রেখা টানে!


আমি ভালবেসেছি তোমাকে, উচ্চ করি শির
অথই সাগর, হারিয়ে ফেলেছো তোমার তূণের তীর
প্রত্যাশিত সাফল্যে তাই নাবিকেরা করে ভীড়!

আমি ভালবেসেছি তোমাকে, প্রথম ব্যর্থ হয়ে
হলোনা সুযোগ, পেলেনা তুমি, আনন্দটা ক্ষয়ে
অতীত গ্লানি, ভাসছে ছবি, তোমার পরাজয়ে!

আমি ভালবেসেছি তোমাকে, তাই ভয় করবো কেন
সাহসের সাথে সঙ্গ দিয়েছি, স্বার্থ ছিলনা জেনো
সাফল্যের আলোক ছটায়, হারালাম আমি মানো?

তবুও আমি তোমাকে ভালবেসেছি, বোঁকার স্বর্গে থেকে
ভালবাসা পেয়ে উন্মাদ তাই উঠবেনা আর জেগে
ভালবাসাহীন নির্মমতায় উঠেছো কখনোও রেগে!


** সুন্দরের উপাসনা সবাই করে ভক্তি ভরে,
তবুও কেন পূজারীদের ভুল রয়েই যায়?


০৯।০৮।০৪

বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০১৪

টুকরো সংজ্ঞা- রাশেদুজ্জামান রন।

বসন্ত। পলাশ ফুলের মাতামাতি,
বন্ধুদের কোলাহল!
নতুনের সাথে পরিচয়, সব ভাললাগে,
এর মাঝেও চোরাটান। বিষাদ, না উচ্ছলতা?
কার কাছে এ প্রশ্ন, জানিনা।


ভবঘুরে। বস্তিতে তোর জায়গা নাই।
ধিক্কারের শোরগোল!
স্ব-জাতির সাথে কোন্দল। সব কিছু ফাঁকা লাগে,
এর মাঝেও গায় গান। হাসি, না উপহাস?
কে জানে এর উত্তর, আমি জানিনা।


বন্ধু। কৃত্রিমতার চরম প্রকাশ,
আবেগের বেদম ছড়াছড়ি!
অভিনয়ের পাঠ শেখা, সব কৌশল ছেলেখেলা,
তবুও সেই অমোঘ ভাষণ, "তোমায় খুব ভালবাসি।"
ন্যাড়া পাগল! বেলতলায় ক'বার যাবি?


শত্রু। সেওতো ভাল,
হলে সত্যের মহান বিজয়!
স্বকীয় শক্তির ভাষা, দারুণ ভাবে জানান দেয়,
তার ছাঁয়া মাড়িয়ে যাবো, ভয় পাই নিজেকে।
ভেবে তুই, বল দেখি, আমি কে?


২৭।০২।২০০৭

বুধবার, ১২ মার্চ, ২০১৪

দুঃসময়ে আমার যৌবন- হেলাল হাফিজ।

মানব জন্মের নাম হবে কলঙ্ক হবে
এরকম দুঃসময়ে আমি যদি মিছিলে না যাই,
উত্তর পুরুষে ভীরু কাপুরুষের উপমা হবো
আমার যৌবন দিয়ে এমন দুর্দিনে আজ
শুধু যদি নারীকে সাজাই।

----------------
হেলাল হাফিজ।
১৪।০২।১৯৭১
কাব্যগ্রন্থঃ যে জলে আগুন জ্বলে। 

নিরাস্রয় পাঁচটি আঙুল- হেলাল হাফিজ।

নিরাস্রয় পাঁচটি আঙুল তুমি নির্দ্বিধায়
অলংকার করে নাও, এ আঙুল ছলনা জানে না।
একবার তোমার নোলক, দুল, হাতে চুড়ি
কটিদেশে বিছা করে অলংকৃত হতে দিলে
বুঝবে হেলেন, এ আঙুল সহজে বাজে না।

একদিন একটি বেহালা নিজেকে বাজাবে বলে
আমার আঙুলে এসে দেখেছিল
তার বিষাদের চেয়ে বিশাল বিস্তৃতি,
আমি তাকে চলে যেতে বলিনি তবুও
ফিরে গিয়েছিল সেই বেহালা সলাজে।

অসহায় একটি অঙ্গুরি
কনিষ্ঠা আঙুলে এসেই বলেছিল ঘর,
অবশেষে সেও গেছে সভয়ে সলাজে।

ওরা যাক, ওরা তো যাবেই
ওদের আর দুঃখ কতটুকু? ওরা কি মানুষ?

হেলাল হাফিজ
০২।০৪।১৯৭০
কাব্যগ্রন্থঃ যে জলে আগুন জ্বলে। 

জড় পথিক- রাশেদুজ্জামান রন।

উচ্ছন্নে যাওয়া স্বপ্নগুলো
ডানা মেলেছে,
অন্ধকারে পথ হাঁতড়ে বেড়ায় পথের আলো যুগো্‌ল,
তাই পথেই দাঁড়াই।
আগলে দাঁড়ানো পথ ছিল সংকীর্ণ,
পরের চর্চায় পরনিন্দা হয় হতভম্ব,
মানুষের ধ্বজা ধরে উড়িয়েছি আশার ছাই।


বেড়ালের জ্বলজ্বলে চোখ খোঁজে বাসাহার,
হিংস্রতা নয় ক্ষুরধার প্রয়োজনীয়তা শেখায় দক্ষতা,
মায়ার বাঁধনে বলে ওঠে মিঁউ মিঁউ,
তপ্ত নিঃশ্বাসে ভারি হয়ে ওঠে ভালবাসা,
ওম ছড়িয়ে যায়!

আজ শুধু উষ্ণতার যুদ্ধ, বাজবে রণদামামা,
কূটচালে ঘায়েল শত্রুপক্ষ,
নিজের অজান্তেই হয়তো, পরাজয়ের ছোঁয়ায় আক্রান্ত,
বুঝতে পারছিনা!
যুক্ত হবেনা ছেঁড়া পাল,
তড়তড়িয়ে যাওয়া হয়নি কোনোদিন,
তাই স্বপ্ন দেখা বন্ধ করেই হাঁটতে থাকো...!


২৪।০৮।০৮

স্বাধীনতা তুমি- রাশেদুজ্জামান রন

স্বাধীনতা তুমি, স্ব-অধীনতার আবরণে জড়িয়ে থাকা শ্বেতপত্র
স্বাধীনতা তুমি, নাম না জানা দুঃখী মানুষের রক্তে লেখা মানচিত্র
স্বাধীনতা তুমি, কঠোর শ্রমে সৃষ্টি হওয়া আবীর ছড়ানো মাঠ
স্বাধীনতা তুমি, তরুণ তুর্কী, বীর আসাদের রক্তে ভেজা শার্ট

পশ্চিমাদের নিপুণ থাবায় দ্বি-চক্রের সংঘাত
শোষকের রুপে দুই বেহায়ার মিলিত বাদ-বিবাদ
স্বাধীনতা তুমি, উত্তাল গতিতে সৃষ্টি করেছো, সাত মার্চের ভাষণ
স্বাধীনতা তুমি, মীরজাফর ও রাজাকারদের মিথ্যা আস্ফালন

গোপনে পালানো, ছোটাছুটি আর হৃদয়ের আহাজারী
মা ছাড়ে শিশু, মাতৃভূমি আর মানুষ শত সারি
ন'মাসে শেষ প্রসব বেদনা, বাঙ্গালীর হুংকারে
পরাজিত হয়ে হায়েনা শাবক, সোনার বাংলা ছাড়ে

স্বাধীনতা তুমি, এলে বীরবেশে রক্ত দেবার পর
দেখেছে বিশ্ব; অবাক নেত্রে, নরপশুদের ঝড়
স্বাধীনতা তুমি, ধ্বংস বিপুল সীমাহীন শুন্যতা
ছিন্ন আত্নায় মিলেছে তবুও মুক্তির বারতা

স্বাধীনতা তুমি, পরাধীনতার 'নামবাচক' শৃংখল
স্বাধীনতা তুমি, খুলে দাও সব সম্ভাবনার অর্গল
স্বাধীনতা তুমি, পতাকা জড়ানো হৃদয়ের সততা
স্বাধীনতা তুমি, মনের শক্তি, তুমি-ই স্বাধীনতা।


রাশেদুজ্জামান রন

২০০৭


*** কবি রাশেদুজ্জামান রন এই কবিতাটি লিখেছিলেন ২০০৭ সালে। ২০০৭ সালের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে টেলিটক "স্বাধীনতা তুমি" শিরোনামে কবিতা আহ্বান করে। সেই ফরমায়েশ পূরণ করতে কবিতাটি লেখেন কবি রাশেদুজ্জামান রন।